বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে বড় এক অধ্যায় হয়ে থাকবে মাশারাফি বিন মর্তুজা। এ নিয়ে দ্বি-মত থাকার কথা না।
বয়স ও শরীরী ভাষা একজন খেলোয়াড়ের জীবনে ভালো প্রভাব ফেলে থাকে। ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যান ৪৩-৪৪ বছরও খেলেছেন আপন ছন্দে। উদাহরণ স্বরূপ পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার মিসবাহ-উল-হকের কথা বলা যায়। তবে নিজের বয়স ৩৮ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত অনেক ব্যাটসম্যানই খেলেছেন/খেলছেন/খেলবেনও। তবে একজন ব্যাটসম্যানের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এবং একজন বোলারের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। আবার বোলারদের মধ্যেও ফাস্ট বোলার ও স্পিনারদের ক্যারিয়ার পার্থক্য রয়েছে।
একজন ফাস্ট বোলারের বলের গতি, রানিং, ক্ষিপ্রতা সবকিছু শরীরী ভাষার ওপর নির্ভর করে। আর সবকিছু ঠিক রাখতে গিয়ে ইনজুরিতেও ফাস্ট বোলারকে পড়তে হয় তুলনামুলক বেশি। বয়স ৩০ পার হলেই দলের নির্বাচকরা স্থলাভিষিক্ত খোঁজা শুরু করেন। ৩২ হলেই হাঁসফাঁস শুরু হয়ে যায়। আবার কৌশলে ব্যাটসম্যানকে কাবু করতে পারলে, গতির অতো কি দরকার? এমন বোলারও রয়েছে। বর্তমানে ব্যাটিং স্বর্গরাজ্যে বোলাররা এখন আর শোয়েব আখতার, ব্রেট লি ও ডেল স্টেইনদের মতো গতির ঝড়ে বেশ নজর দেন না। এখন দলে টিকে থাকতে উইকেট ও ইকোনোমি ফলো করে, তাই বোলাররা কৌশলি হয়ে উঠছেন।
বল হাতে ঝড় তুলে এক সময় নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাতি পান বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু ইনজুরি মাশরাফির ক্যারিয়ার এবং গতি অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। এরপরও তিনি দমে জাননি। রানিং ও বলিংয়ে পরিবর্তন এনে সফলও হয়েছেন বার বার। সব বাধাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩৭ বছর বয়সেও খেলে যাচ্ছেন দারুণ।
মাশরাফির শরীর-বয়স, অবসর-খেলা চালিয়ে যাওয়া এসবের ওপর ভর করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভক্তি দেখা যায় ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। কারো প্রশ্ন, মাশরাফি কেন বিশ্বকাপে অবসর নিলেন না? সে সময় অবসর নিলে সেটি সুন্দর হতো। আবার কারো বক্তব্য, মাশরাফি অবসরের ঘোষণা দিক, তাকে বড় আয়োজন করে বিদায় দেয়া হোক। কেউ বলছে, তার উচিত সম্মানের সাথে অবসর ষোষণা দেয়া এবং নতুনদের সুযোগ দেয়া।
অন্য দিকে বর্তমান পারফরম্যান্সের ওপর ভর করে একপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দেখতে চেয়েছিলেন মাশরাফিকে।
মাশরাফি খেলা পাগল একজন মানুষ। যিনি 'ছয়' বার পায়ে অস্ত্রপাচার করেও ক্রিকেট মাঠে ফিরেছেন! তার থেকে 'বিদায়' শব্দ শুনা একটু কঠিন হতেই পারে।
তবে তিনি ক্রিকেটে বোর্ডকে সব সময় সম্মান করতে দেখা গিয়েছে। মাশরাফি থেকে যতটুকু পাওয়া দরকার তা পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। মানলাম, সামনের বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাশরাফির সার্ভিস হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেট নিতে পারে, তবে অধিনায়ক হিসেবে নতুন কাউকে সিলেক্ট করা লাগতোই। কারণ, মাশরাফির বয়স এবং শরীরীভাষা সামনের বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেয়া কঠিন হতে পারে। রীতিমতো একজন পেসারের ক্যারিয়ারের সীমাবদ্ধতা কোথায় তা হয়তো ক্রিকেট বোর্ড জান। তাই আগেই অধিনয়াক পরিবর্তন করাটা খারাপ করেনি বিসিবি।
কিন্তু শেষ বেলায়ও মাশরাফিকে প্রাধান্য দিয়েছে বোর্ড। মাশরাফি এখনো অবসর নেননি। সুযোগ আছে খেলারও। তবে মাশরাফিরও জোর জবরদস্তি নেই। দলে রাখলে খেলবেন, না রাখলে না!
তবে আমাদের ভক্তদের উচিত ক্রিকেট ও ক্রিকেটার উভয়কে সম্মান করা এবং বুঝা। কারণ মাশরাফিরা অদম্য। তারা বার বার স্বপ্ন দেখায়, বার বার ফিরে আসার ক্ষমতা রাখে।
লাইছ ত্বোহা, সংবাদকর্মী
এটি সম্পূর্ন লেখকের নিজস্ব মতামত
বাংলাবাজার / এফ এ
আপনার মতামত লিখুন : :